Kudrat Ullah

Kudrat Ullah
Educator

শুক্রবার, জুন ৩০, ২০১৭

ভালোবাসার ‘কারন’

একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন,
এই পৃথিবীতে কেউ আপনাকে ‘কারন’ ছাড়া ভালোবাসে না।
.
আপনি দেখতে সুন্দর ও আকর্ষনীয়-
মানুষ আপনাকে ভালবাসবে।
অনেকে আপনার চেহারার প্রশংসা করবে।
.
আপনি খুব মেধাবী স্টুডেন্ট,
ভবিষ্যত দারুন উজ্জ্বল- মানুষ আপনাকে ভালোবাসবে।
অনেকেই আপনাকে আরও ভালো করতে উৎসাহিত করবে।
.
আপনি ভালো গান গাইতে পারেন-
মানুষ আপনাকে 
ভালোবাসবে।
আপনার গান শুনতে চাইবে।
আপনাকে গান গেয়ে আরও বড় কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখাবে।
.
আপনি ভালো লিখতে পারেন- মানুষ আপনাকে 
ভালোবাসবে।
আপনাকে বাহবা দিবে।
নতুন কোনো বই অথবা পত্রিকার কলাম লিখতে উৎসাহিত করবে।
অথবা ফেসবুকে আপনার পোষ্টের কমেন্ট বক্সে ভালোবাসার ফুলঝুরি ছুটাবে।
বিপরীত লিংগের মানুষ থেকে শুরু করে একই লিংগের মানুষ গুলোও ‘লাভ’ ইমো দিবে।
.
আপনি সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারেন।
কথার যাদুতে যে কাউকে মুগ্ধ করতে পারেন-
মানুষ আপনাকে 
ভালোবাসবে।
আপনি তাদের আড্ডার মধ্যমণি হয়ে থাকবেন।
সবাই আপনার সাথে কথা বলতে চাইবে।
প্রয়োজনে মোবাইলে ১২ টাকায় ৪০ মিনিট কিনে নিবে।
.
আপনি ভালো খেলেন- মানুষ আপনাকে 
ভালোবাসবে।
আপনি মাঠে নামলেই মাঠের চারপাশ থেকে দর্শকের হাততালি ও চিৎকারের ধব্বনি ভেসে আসবে।
.
...পৃথিবীতে ভালবাসাটা তাদের জন্যই বরাদ্দ,
যাদের অবশ্যই কোনো না কোনো গুণের অধিকারী হতে হবে।
ভালোলাগার মত একটা সাইড থাকতেই হবে।
অতঃপর সেই ভালো লাগাটাকে কেন্দ্র করেই মানুষ তাকে ভালোবাসবে।
.
বিচিত্র কোনো এক কারনে,
মানুষ একদমই সাদামাটা ও সাধারণ কাউকে ভালোবাসতে পারে না।
না পায় তারা আশেপাশের মানুষের ভালোবাসা,
না পায় তারা বিশেষ মানুষটির 
ভালোবাসা
কেবলমাত্র নিজের মা-বাবা এবং রক্তের সম্পর্ক গুলো ছাড়া।
.
বিশেষ মানুষটির 
ভালোবাসা সে কোনো ভাবে পেয়ে গেলেও,
সেই বিশেষ মানুষটি একটা সময় তাকে ছেড়ে চলে যায়,
তাকে প্রতারিত হতে হয়।
গভীর রাতে বালিশ জড়িয়ে কাঁদতে হয়।
.
সেই বিশেষ মানুষটিও তাকে ‘কারন’ ছাড়া 
ভালোবাসেনি। সেই কারনটি ছিল স্বার্থ।
যেকোনো প্রকার স্বার্থের জন্যই সে তার মত একদমই সাধারণ কাউকে ভালবেসেছিল!
স্যরি ভুল বললামভালোবাসার অভিনয় করেছিল।
.
যারা মাত্রাতিরিক্ত আবেগের সুরে
বলবে,
ভালোবাসতে কোনো কারন লাগেনা’
অথবা
আমি তোমাকে কোনো কারন ছাড়াই ভালোবাসি’
...বুঝে নিয়েন, সেটি আসলে মারাত্মক রকমের মিথ্যে কথা।

সোমবার, জুন ২৬, ২০১৭

ফেরাউনের মৃতদেহ

ফেরাউনের মৃতদেহকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে নিদর্শন স্বরূপ
.......
আজ আমি তোমাকে (অর্থাৎ) তোমাদের দেহকেই বাঁচিয়ে
রাখবো, যাতে করে তুমি (তোমার এ দেহ) পরবর্তী ( প্রজন্মের
লোকেদের) জন্যে একটা নিদর্শন হয়ে থাকতে পারো; অবশ্য
অধিকাংশ মানুষই আমার (এসব) নিদর্শনসমূহ থেকে সম্পূর্ণ
(অজ্ঞ ও) বেখবর। (সুরাঃ- ইউনুস, আয়াতঃ- ৯২)


চৌদ্দশত বছর পূর্বে কুরআন মাজিদ ভবিষ্যৎবানী করছে, আল্লাহ্ তা'আলা ফেরাউনের দেহ সংরক্ষণ করবেন।


প্রত্নতত্ত্ববিদরা সম্প্রতি ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে ফেরাউন "মাইনপথ"- এর দেহ আবিস্কার করেছে, যে মূসা আঃ-এর পশ্চাদ্ধাবন করতে গিয়ে ডুবে গিয়েছিলেন। এটি বর্তমানে কায়রোর একটি মিউজিয়ামে কুরআন মাজিদের একটি জীবন্ত মুজিজারূপে তাদের জন্য সংরক্ষিত আছে যারা আল্লাহ্ তা'আলার নিদর্শনের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। স্মর্তব্য যে, বাইবেলেও বর্ণিত আছে, ফেরাউন সমুদ্রে নিমজ্জিত হবে। কিন্তু পরবর্তীতে তার দেহ কি হবে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই । পক্ষান্তরে বাস্তবতা হল, কুরআন মাজিদ উল্লেখ করেছে, আল্লাহ্ তা'আলার ফেরাউনের দেহ সংরক্ষণ করবেন। যা অন্য একটি প্রমান যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন মাজিদ বাইবেল থেকে নকল করেন নি। বরং তাঁর জ্ঞানের উৎস হল সর্বজ্ঞাতা আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ থেকে আসমানি আহি ।





ফেরাউনের মৃতদেহ সম্পর্কেঃ

১। মৃতদেহটি ফারাও রামিজ-২ এর যে ছিল একজন মিশরীয় ফারাও বংশের রাজা
২। এর বয়স আনুমানিক ৩০০০ বছর
৩। মৃতদেহটি লোহিত সাগরের জাবালিয়ান নামক স্থানে ১৮৯৮ সালে পা্ওয়া যায়
৪। মৃতদেহটি বর্তমানে মিশরের কায়রোর “রয়েল মাম্মিস চেম্বার” নামক জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে
৫। আশ্চর্যজনকভাবে কোনপ্রকার মমিকরন ছাড়াই এটি অবিকৃত আছে। যার আভ্যন্তরীন সকল অঙ্গ ঠিকঠাক আছে
৬। মিশরে যে আরো মমি পাওয়া্ গেছে সেগুলোও এতটা ভালো অবস্থায় নেই যতটা না আছে ফেরাউনের মৃতদেহ
৭। ৩০০০ এরও বেশি সময় এটি সাগরগর্ভে ছিল
৮। সাগরের মাছেরা এর মাংস খেয়ে ফেলতে পারতো কিন্তু খায় নি

শ্রীলংকার রহস্যময় এক পাহাড়

নাম তার আদম পাহাড়।
নানা কারণে এ পাহাড়টি রহস্যে ঘেরা।  এর শীর্ষে রয়েছে বিরাট আকারের এক পায়ের ছাপ। রহস্য তা নিয়েই। এ পায়ের ছাপকে সব ধর্মের মানুষই পবিত্র হিসেবে মনে করে।
.

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিশ্বে নানা রকম পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। তা নিয়ে রয়েছে নানা জল্পনা কল্পনা। এসব পায়ের ছাপ একেকটা একেক রকম। আকৃতি নানা রকম। কিন্তু এসব পায়ের ছাপ সম্পর্কে মানুষের জানার আগ্রহ দীর্ঘদিন ধরে। এমনই এক পায়ের ছাপ আদম পাহাড়ে। শ্রীলংকার মুসলমানরা বিশ্বাস করেন পৃথিবীর আদি মানব হজরত আদম (আ.) প্রথম এই শ্রীলংকায় পদার্পণ করেছিলেন। ওই পাহাড়ে রয়েছে তারই পায়ের ছাপ। তার জন্য এ পাহাড় ও পাহাড়ের ওই পায়ের ছাপ মুসলমানদের কাছে পবিত্র হিসেবে পরিণতি হয়ে আসছে।
.

শুধু শ্রীলংকার মুসলমানরাই নয়, এর বাইরের অনেক দেশের মুসলমান বিশ্বাস করেন হজরত আদম (আ.)-কে যখন পৃথিবীতে পাঠানো হয় তখন তিনি প্রথম পা রাখেন শ্রীলংকায়। আর আদম পাহাড়ের ওপর ওই পায়ের ছাপ দেখে তারা মনে করেন তা হজরত আদম (আ.)-এর। এজন্য মুসলমানরা এ পাহাড়কে অসীম শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। আর এজন্য এর নাম দেয়া হয়েছে আদমস পিক বা আদমের পাহাড়। এ পাহাড়ের প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে রহস্য। এ পাহাড়ের চূড়ায় যে পদচিহ্ন রয়েছে সেখানে পৌঁছা খুব ঝুঁকিপূর্ণ এডভেঞ্চার। তবে অনেকে ঝুঁকি নিয়ে সেখানে গিয়েছেন। তারা নিজের চোখে ওই পায়ের ছাপ দেখে বিস্মিত হয়েছেন। এই পায়ের ছাপ শুধু মুসলমানদের কাছেই নয়, একই সঙ্গে বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও হিন্দুদের কাছেও পবিত্র। তারাও মনে করেন তাদের ধর্মের সঙ্গে এর রয়েছে ওতপ্রোত সম্পর্ক। এতে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, আদমের পাহাড় সব শ্রেণীর মানুষের কাছেই পবিত্র। তারা শ্রদ্ধার চোখে দেখেন এ পাহাড়কে। তারা সবাই স্বীকার করেন এ পাহাড়ের চূড়ায় আছে ওই পবিত্র পদচিহ্ন। তার আকৃতি বিশাল। শুধু এজন্যই নয়, এ পাহাড় নিজেই একটি রহস্য।
.

এ্যাডামস পিক পাহাড় আরোহণ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। চূড়ায় পৌঁছতে হলে যে পথ তা চলে গেছে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে। সেই জঙ্গল নানারকম ঝুঁকিপূর্ণ। আছে বিষধর কীটপতঙ্গ। তবে চূড়ার কাছাকাছি একটি ধাতব সিঁড়ি আছে। তাতে রয়েছে ৪০০০ ধাপ। এর প্রতিটি ধাপ নিরাপদ নয়। তার ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে শীর্ষে যেতে হলে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা সময় লাগে। জটিল এক আবহাওয়ার এক অঞ্চলের মধ্যে এর অবস্থান। বছরে মাত্র তিন থেকে চার মাস এ পাহাড়ে আরোহণ করা যায়। বছরের অন্য সময়টাতে এতে আরোহণ অসম্ভব হয়ে ওঠে। কারণ, কাব্যিক অর্থে বলা যায় এ পাহাড় তখন মেঘের ভিতর লুকিয়ে যায়। চারদিক থেকে মেঘে জেঁকে ধরে।
.

এ পাহাড় ও পাহাড়ের পদচিহ্ন নিয়ে একটি বই লিখেছেন মারকুস অকসল্যান্ড। বইটির নাম ‘দ্য স্যাক্রেট ফুটপ্রিন্ট: এ কালচারাল হিস্ট্রি অব আদমস পিক’। এতে বলা হয়েছে, এ পাহাড়টি ২২৪৩ মিটার উঁচু। আকৃতি কোণের মতো। ভারত মহাসাগর থেকে এ পাহাড় পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। আগেকার দিকে আরবের সৌখিন ব্যক্তিরা সমুদ্র যাত্রায় এসে পিরামিডের আকৃতির এ পাহাড় দেখে পুলকিত হতেন। তাদের কেউ কেউ এটাকে বিশ্বের সর্বোচ্চ পাহাড় বলেও অভিহিত করেছেন। প্রাচীনকালে সিংহলিরাও এ পাহাড়কে বিশাল উচ্চতার বলে মনে করতেন। কেউ কেউ মনে করতেন এটিই বিশ্বের সর্বোচ্চ পাহাড়। ৮৫১ সালে এ পাহাড়ে পদচিহ্ন প্রথম দেখতে পান আরবের সোলাইমান। রত্নপুরা হয়ে পবিত্র এ পাহাড়ে আরোহণ করেছিলেন বিখ্যাত আরব দার্শনিক ইবনে বতুতা। তিনি এখানে উঠার জন্য যাত্রা শুরু করেছিলেন বারবেরিন থেকে। তার আগে ব্যাপক পরিচিত বণিক ও ভ্রমণ পিপাসু মার্কো পোলো আদমের পদচিহ্নে তার সম্মান জানানোর জন্য আরোহণ করেন এ পাহাড়ে। তিনি ১২৯২ সালে চীন থেকে ভেনিস যাওয়ার পথে এ সফর করেন।
.

এ পাহাড়ের চূড়া সামান্য একটি সমতল ক্ষেত্র। ১৮১৬ সালে লেফটেন্যান্ট ম্যালকম এর পরিমাপ করেন। তাতে দেখা যায় এর দৈর্ঘ্য ৭৪ ফুট এবং প্রস্থ মাত্র ২৪ ফুট। মোট আয়তন ১৭৭৬ বর্গফুট। এর চূড়ায় রয়েছে একটি প্রকাণ্ড পাথরখণ্ড। এর উচ্চতা ৮ ফুট। এর ওপরেই রয়েছে ওই পদচিহ্ন। এর দৈর্ঘ্য ৬৮ ইঞ্চি। ৩১ ইঞ্চি চওড়া। তবে বৌদ্ধরা মনে করেন, ওই পদচিহ্ন হলো বুদ্ধের বাম পায়ের। বুদ্ধ তার অন্য পা রেখেছিলেন বর্তমানের থাইল্যান্ডে (আগে যা সিয়াম নামে পরিচিত ছিল)। থাইল্যান্ডে রয়েছে তার ডান পায়ের ছাপ। থাই ভাসায় একে বলা হয় ফ্রা স্যাত। সেখানে পায়ের ছাপের যে মাপ তা আদম পাহাড়ের পায়ের ছাপের মতোই। আকারও এক রকম। একই রকম পদচিহ্ন আরও পাওয়া গেছে লাওসে, ক্যাবোজে ও চীনে। বৌদ্ধরা ধারণা করেন, বুদ্ধ ছিলেন ৩৫ ফুট লম্বা। তাই তিনি এত দূরে দূরে পা ফেলতেন। তবে এই পদচিহ্নকে খ্রিস্টানরাও সম্মানের চোখে দেখে। ১৫০৫ সালে শ্রীলংকা সফরে এসেছিলেন পর্তুগিজ এক নাগরিক। তিনি এ পাহাড়কে বলেছেন পিকো ডি আদম। তারা মনে করেন সেইন্ট থমাস দ্য ডাউবটার ভারত ও শ্রীলংকা এসেছিলেন। এরপর তিনি এই পাহাড়ে পা রেখে স্বর্গে চলে গিয়েছেন। তবে হিন্দুরা মনে করেন, ওই পদচিহ্ন হলো শিবের পায়ের।
.

সকল ধর্মের মানুষের কাছেই এ এক মিলন মেলার নাম যেখানে সকলেই খুঁজে পায় তার বিশ্বাস আর শান্তির উৎস।

শাদ্দাদের বেহেশত

শাদ্দাদের বেহেশতের কাহিনী
............
হযরত হুদ (আঃ) এর আমলে শাদ্দাদ নামে একজন অতীব পরাক্রমশালী ঐশ্বর্যশালী মহারাজা ছিল। আল্লাহর হুকুমে হযরত হুদ (আঃ) তার কাছে ইসলামের দাওয়াত পেশ করেন এবং দাওয়াত গ্রহণ করলে আখেরাতে বেহেশত লাভ অন্যথায় দোযখে যাওয়া অবধারিত বলে জানান। শাদ্দাদ হযরত হুদ (আঃ) এর কাছে বেহেশত ও দোযখের বিস্তারিত বিবরণ জানতে চাইলে তিনি জানান। শাদ্দাদ তাকে বলল, তোমার আল্লাহর বেহেশত আমার প্রয়োজন নেই। বেহেশতের যে নিয়ামত ও সুখ-শান্তির বিবরণ তুমি দিলে, অমন বেহেশত আমি নিজে এই পৃথিবীতেই বানিয়ে নিব। তুমি দেখে নিও।

হযরত হুদ (আঃ) তাকে হুশিয়ার করে দিলেন যে, আল্লাহ পরকালে যে বেহেশত তৈরী করে রেখেছেন, তোমার বানানো বেহেশত তার ধারে কাছেও যেতে পারবেনা। অধিকন্তু তুমি আল্লাহর সাথে পাল্লা দেয়ার জন্য অভিশপ্ত হবে। কিন্তু শাদ্দাদ কোন হুশিয়ারীর তোয়াক্কা করলো না। সে সত্যি সত্যিই দুনিয়ার উপর একটি সর্ব-সুখময় বেহেশত নির্মানের পরিকল্পনা করল। তার ভাগ্নে জোহাক তাজী তখন পৃথিবীর অপর প্রান্তে এক বিশাল সম্রাজ্যের অধিকারী ছিল। অধিকন্তু পারস্যের সম্রাট জামশেদের সম্রাজ্য দখল করে সে প্রায় অর্ধেক দুনিয়ার প্রতাপন্বিত সম্রাটে পরিনত হয়েছিল।

মহারাজা শাদ্দাদ সম্রাট জোহাক তাজী কে চিঠি লিখে তার বেহেশত নির্মানের পরিকল্পনা জানালো। অতঃপর তাকে লিখলো যে, তোমার রাজ্যে যত স্বর্ণ-রৌপ্য, হিরা-জহরত ও মনি-মাণীক্য আছে, তা সব সংগ্রহ করে আমার দরবারে পাঠিয়ে দাও। আর মিশক-আম্বর জাতীয় সুগন্ধী দ্রব্য যত আছে, তা পাঠিয়ে দাও। অন্যান্য রাজা-মহারাজাদের কাছেও সে একই ভাবে চিঠি লিখলো এবং বেহেশত নির্মানের পরিকল্পনা জানিয়ে সবাইকে প্রয়োজনীয় নির্মান সামগ্রী পাঠানোর আদেশ জারী করলো। পৃথিবীর সকল অঞ্চলের অনুগত রাজা-মহারাজারা তার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করল। এবার বেহেশতের স্থান নির্বাচনের পালা। বেহেশত নির্মানের উপযুক্ত স্থান খুজে বের করার জন্য শাদ্দাদ বহু সংখ্যক সরকারী কর্মচারী কে নিয়োগ করল। অবশেষে ইয়ামানের একটি শস্য শ্যামল অঞ্চলে প্রায় একশ চল্লিশ বর্গ মাইল এলাকার একটি জায়গা নির্বাচন করা হল।

.
বেহেশত নির্মানের জন্য নির্মান সামগ্রী ছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকে বাছাই করা দক্ষ মিস্ত্রী আনা হল। প্রায় তিন হাজার সুদক্ষ কারিগর কে বেহেশত নির্মানের জন্য নিয়োগ করা হল। নির্মান কাজ শুরু হয়ে গেলে শাদ্দাদ তার অধীনস্থ প্রজাদের জানিয়ে দিল যে, কারো নিকট কোন সোনা রূপা থাকলে সে যেন তা গোপন না করে এবং অবিলম্বে তা রাজ দরবারে পাঠিয়ে দেয়।

.
এ ব্যাপারে তল্লাশী চালানোর জন্য হাজার হাজার কর্মচারী নিয়োগ করা হল। এই কর্মচারীরা কারো কাছে এক কণা পরিমাণ সোনা-রূপা পেলেও তা কেড়ে নিতে লাগল। এক বিধবার শিশু মেয়ের কাছে চার আনা পরিমান রূপার গহণা পেয়ে তাও তার কেড়ে নিল। মেয়েটি কেদে গড়াগড়ি দিতে লাগল। তা দেখে বিধবা আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ জানাল যে, হে আল্লাহ ,এই অত্যাচারী রাজা কে তুমি তার বেহেশত ভোগ করার সুযোগ দিও না। দুঃখিনী মজলুম বৃদ্ধার এই দোয়া সম্ভবত কবুল হয়ে গিয়ে ছিল।
.

ওদিকে মহারাজা শাদ্দাদের বেহেশত নির্মানের কাজ ধুমধামের সাথে চলতে লাগল। বিশাল ভূখন্ডের চারদিকে চল্লিশ গজ জমি খনন করে মাটি ফেলে মর্মর পাথর দিয়ে বেহেশতের ভিত্তি নির্মান করা হল। তার উপর সোনা ও রূপার ইট দিয়ে নির্মিত হল প্রাচীর। প্রাচীরের উপর জমরূদ পাথরের ভীম ও বর্গার উপর লাল বর্ণের মূল্যবান আলমাছ পাথর ঢালাই করে প্রাসাদের ছাদ তৈরী হল। মূল প্রাসাদের ভিতরে সোনা ও রূপার কারূকার্য খচিত ইট দিয়ে বহু সংখ্যক ছোট ছোট দালান তৈরী করা হল।
.
সেই বেহেশতের মাঝে মাঝে তৈরী করা হয়েছিল সোনা ও রূপার গাছ-গাছালি এবং সোনার ঘাট ও তীর বাধা পুস্করিনী ও নহর সমূহ। আর তার কোনটি দুধ, কোনটি মধু ও কোনটি শরাব দ্বারা ভর্তি করা হয়েছিল। বেহেশতের মাটির পরিবর্তে শোভা পেয়েছিল সুবাসিত মেশক ও আম্বর এবং মূল্যবান পাথর দ্বারা তার মেঝে নির্মিত হয়েছিল। বেহেশতের প্রাঙ্গন মনি মুক্তা দ্বারা ঢালাই করা হয়েছিল। বর্ণিত আছে যে, এই বেহেশত নির্মাণ করতে প্রতিদিন অন্ততঃ চল্লিশ হাজার গাধার বোঝা পরিমান সোনা-রূপা নিঃশেষ হয়ে যেত। 

.
এইভাবে একাধারে তিনশ’ বছর ধরে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। এরপর কারিগরগণ শাদ্দাদ কে জানাল যে, বেহেশত নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। শাদ্দাদ খুশী হয়ে আদেশ দিল যে, এবার রাজ্যের সকল সুন্দর যুবক-যুবতী ও বালক- বালিকাকে বেহেশতে এনে জড়ো করা হোক। নির্দেশ যথাযথভাবে পালিত হল। অবশেষে একদিন শাদ্দাদ সপরিবারে বেহেশত অভিমুখে রওনা হল। তার অসংখ্য লোক-লস্কর বেহেশতের সামনের প্রান্তরে তাকে অভিবাদন জানাল। শাদ্দাদ অভিবাদন গ্রহণ করে বেহেশতের প্রধান দরজার কাছে গিয়ে উপনীত হল। দেখল একজন অপরিচিত লোক বেহেশতের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। শাদ্দাদ তাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কে? লোকটি বললেনঃ আমি মৃত্যুর ফেরেশতা আজরাঈল। শাদ্দাদ বললঃ তুমি এখন এখানে কি উদ্দেশ্যে এসেছ? আজরাঈল বললেনঃ আমার প্রতি নির্দেশ এসেছে তোমার জান কবজ করার। শাদ্দাদ বললঃ আমাকে একটু সময় দাও। আমি আমার তৈরী পরম সাধের বেহেশতে একটু প্রবেশ করি এবং এক নজর ঘুরে দেখি। আজরাঈল বললেনঃ তোমাকে এক মুহুর্তও সময় দানের অনুমতি নেই। শাদ্দাদ বললঃ তাহলে অন্ততঃ আমাকে ঘোড়া থেকে নামতে দাও। আজরাঈল বললেনঃ না, তুমি যে অবস্থায় আছ, সে অবস্থায়ই তোমার জান কবজ করা হবে। শাদ্দাদ ঘোড়া থেকে এক পা নামিয়ে দিল। কিন্তু তা বেহেশতের চৌকাঠ স্পর্শ করতে পারলনা। এই অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটল। তার বেহেশতের আশা চিরতরে নির্মূল হয়ে গেল।
.
(হাদীসের কিসসা-আকরাম ফারুক থেকে
সংগৃহীত)

আল্লাহ তা'য়ালা ও হযরত মুসা (আঃ)

একবার আল্লাহ তা'য়ালা 
হযরত মুসা (আঃ) কে বললেন,
.
হে মুসা! দুনিয়ার মানুষ আমার কাছে ছয়টি জিনিস চায়,আমিও তাদেরকে ছয়টি জিনিষ দিতে চাই।কিন্তু ছয়টি জিনিস আমি যেখানে রেখেছি মানুষ সেখানে তালাশ না করে অন্য জায়গায় তালাশ করে, বলো মুসা মানুষ পাবে কি করে?
.
(১) দুনিয়ার মানুষ আমাকে সন্তূষ্ট করতে চায়, আর আমিও সন্তুষ্ট হতে চাই। কিন্তু সন্তুষ্ট রেখেছি আমি নফসের বিরুদ্ধে চলার মাধ্যমে, আর মানুষ আমার সন্তুষ্টি তালাশ করে নফসের গোলামি করার মাধ্যমে।
.
(২)মানুষ শান্তি চায়, আর আমিও শান্তি দিতে চাই কিন্তু শান্তি রেখেছি আমি জান্নাতের মধ্যে, আর মানুষ শান্তি তালাশ করে দুনিয়ার মধ্যে।
.
(৩) মানুষ জ্ঞানী হতে চায়, আর আমিও জ্ঞানী বানাতে চাই। কিন্তু জ্ঞানকে আমি রেখেছি ক্ষুধার কষ্টে আর সফরের কষ্টের মধ্যে। আর মানুষ জ্ঞান তালাশ করে আরাম আর বিলাসিতার মধ্যে।
.
(৪) মানুষ সম্মানিত হতে চায়,আর আমিও মানুষকে সম্মানিত করতে চাই। কিন্তু সম্মানকে আমি রেখেছি তাক্বওয়ার মধ্যে, আর মানুষ সম্মান তালাশ করে বড়লোকদের সাথে সসম্পর্ক রাখার মধ্যে।
.
(৫) মানুষ ধনী হতে চায়, আর আমিও মানুষদেরকে ধনী বানাতে চাই। কিন্ত ধনাট্যতা রেখেছি আমি অল্প তুষ্টির মধ্যে, আর মানুষ ধনাট্যতা তালাশ করে মাল- সম্পদের আধিক্যতার মধ্যে।
.
(৬) মানুষ তাদের দোয়া কবুল করাতে চায়, আর আমিও তাদের দোয়া কবুল করতে চাই। কিন্তু দোয়া কবুলিয়াতকে আমি রেখেছি হালাল খাদ্যের মধ্যে, আর মানুষ দোয়া কবুল করাতে হারাম খাদ্য খেয়ে।

People Liked